Wednesday, April 17, 2024

রড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেতু, ভেঙে পড়ার শঙ্কা

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু :

কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত ২০০ ফুট লম্বা আতিক্কা বিবির সেতুটির তিনটি পিলারের পাইলিং এর ঢালাই খসে পড়েছে, দেখা যাচ্ছে রড়। প্রায় লক্ষাধিক লোকের যাতায়তের একমাত্র এই সেতু যেকোন মুহুর্তে ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বড় কোন ট্রাক বা পিকাপ সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের সময় কাঁপছে সেতুটি।

রামু সদরের চৌমুহনী থেকে রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, সোনাইছড়ি ও ফঁতেখারকুল চারটি ইউনিয়নের প্রায় দশটির অধিক গ্রামে যেতে হয় সেতুটির উপর দিয়ে। সূত্রমতে দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতিক্ষার পর প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে শুরু হয়েছিলো সেতু নির্মাণের কাজ। তবে সেতুর কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিলো প্রায় তিন বছরের বেশি।

গত ৭ মে (রবিবার) সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেতুর প্রতি পিলারের নিচে আছে ছয়টি পাইলিং পিলার। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পানির উপরিভাগে থাকা পাইলিং পিলারের সিমেন্টের ঢালাই খসে রড় দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া অন্তত চারটি পাইলিং পিলারের ঢালাই সম্পূর্ণ খসে শুধুমাত্র রড়ের উপর ভর দিয়েই দাঁড়িয়ে আছে সেতু।

চার ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের মানুষের মাঝে সেতুটির পিলারের ঢালাই খসে পড়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ গাড়িযোগে চৌমুহনী সদরে যাওয়ার একমাত্র সেতু এটি। সেতুটি ভেঙে পড়লে রামু সদরের সাথে চার ইউনিয়ের এসব গ্রামের মানুষের গাড়ি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

রাজারকুল ইউনিয়নের বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাঁকখালী নদী পার হয়েছি ছোট ডিঙি নৌকা করে। বর্ষা আসলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হতো। ২০১৫ সালের দিকে ব্রিজটি হলেও এই কয়েক বছরের মাথায় পাইলিং এর ঢালাই সরে গিয়ে রড় দেখা যাচ্ছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, কাউয়ারখোপ ও সোনাইছড়ির বিস্তৃর্ণ জনপদকে রামু সদরের সাথে যুক্ত করেছে সেতুটি। সেতুটি ভেঙে পড়লে রামু সদরের সাথে সকল অর্থনৈতিক ও কৃষি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যা্বে। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন ব্রিজটির।

তবে নিম্নমানের বালি-সিমেন্ট ব্যবহার করে সেতু নির্মাণের কারণেই কয়েক বছরের মধ্যে সেতুর পিলারের পাইলিং পিলারের ঢালাই খসে পড়েছে বলে দাবী স্থানীয় অনেকের। বিজয় বড়ুয়া বলেন, আমরা দেখেছি সে সময় নদীর পলিযুক্ত বালি দিয়েই সেতুর ঢালাই দেওয়া হয়েছিলো সেতুর সব পিলার। নিম্নমানের কাজের কারণেই জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটির এই বেহাল দশা বলে দাবী তার।

এদিকে নির্মাণের কয়েক বছরেই সেতুর এমন বেহাল দশার দায় নিতে চায় না সেতুটির নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আছাদ এন্টারপ্রাইজ। আছাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আছাদ উল্লাহ মুঠোফোনে জানান, দশ-পনেরো বছর আগে করা ব্রিজ। একটা ব্রিজ এতদিন থাকে না। পলিযুক্ত নদীর বালি ব্যবহার করেই ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে এই ঠিকাদার বলেন, অনেক আগের কাজ কোন বালি ব্যবহার হয়েছিলো মনে নেই।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামু উপজেলা প্রকৌশলী মন্জুর হাছান ভূইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতোমধ্যেই সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলায় সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিম আজ-কালকের মধ্যে আসবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কার কাজ করা হবে।

বর্ষা মৌসুমে বাঁকখালী নদীর পানি বাড়লে এবং অতিবেগে নদীর পানি চলাচলে সেতুটির খসে পড়া ঢালাইয়ের আরও অংশ ভেঙে পুরো সেতুটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেতুটির মূল পিলারের এমন বেহাল দশা হলেও ইউনিয়ন বা উপজেলার কোন দপ্তর থেকে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কোন প্রকার সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড না দেওয়া ও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উঠেছে প্রশ্ন। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সেতুটির সংস্কার জরুরী বলেও মনে করছেন চার ইউনিয়নের সচেতন জনগণ।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page