শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও :
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ও মায়ানমার থেকে মরণ নেশা ইয়াবা-আইস সাগর পথে সরাসরি এসে খালাস হচ্ছে কক্সাবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ব্রীজ সংলগ্ন ঘাটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি কম থাকায় দেদারসে খালাস করছিল মাদক পাচারকারীরা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চালান ১৪ লাখ পিস ইয়াবাও এ ঘাট থেকে জব্দ করেছিল কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বর্ণিত স্থান থেকে সাগর পথে চৌফলদন্ডী ব্রীজ সংলগ্ন ঘাটটি নিরাপদ জোন হিসেবে মাদক পাচারকারীদের দৃষ্টিতে রয়েছে। একাধিক বার এ ঘাট দিয়ে ইয়াবা খালাস পরবর্তী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে আসছে। নাপ্পি, লবণ, শুটকি মাছ আমদানির আড়ালে কয়েকটি ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিবহন যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করতে গিয়ে আটকও হয়েছে কয়েকজন ইয়াবা সম্রাট, ফের জামিনে এসে নেমে পড়ে মাদক পাচারে।
অত্যান্ত কৌশলে মাদক পাচারকারীরা এ স্থানটি বেচে নিয়েছে বলে জানান সচেতন মহল। তারা বলেন, সাগরে থাকা শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত এ ঘাটে ইয়াবা খালাস হয়। ইয়াবা খালাসের সময় কয়েকবার ইয়াবা বড়ি ছিনতাইও হয়েছে বলে জানান তারা।
পাচারের উদ্দেশ্য খালাস করে অন্যত্রে নিয়ে যাওয়ার পথে একটি চালান আনে মাদক পাচারকারীরা। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঈদগাঁও এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসায় র্যাব।র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় ২ জনকে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে বাজারের ব্যাগ থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (১৬ মে) রাতে ঈদগাঁও আলমাছিয়া মাদ্রাসা সড়ক থেকে ধৃত দুই পাচারকারী হলো টেকনাফের কুখ্যাত ইয়াবা সম্রাট হজমর পাড়া কচুবনিয়াছড়ার মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে জাকির হোসেন (৩৯) প্রকাশ জকির ও একই এলাকার নুরুল বসরের ছেলে মোঃ ইসমাইল (৩৫)।
র্যাব জানায়, ধৃত জকির একজন কুখ্যাত ইয়াবা সম্রাট, সম্প্রতি মায়ানমারে জসিম উদ্দিন নামক এক যুবককে ইয়াবার ডিলারে বন্ধক রেখে ২৫ লক্ষ টাকার ইয়াবা আনে। এই সব ইয়াবার টাকা পরিশোধ না করায় ইয়াবা ডিলারগণ কথিত জসিমকে শারীরিক নির্যাতন করে। ভিডিও প্রকাশের পরেই সংশ্লিষ্ট মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে যায়। বর্ণিত ঘটনা বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিষয়টি র্যাবের দৃষ্টিগোচরে আসে এবং র্যাব-১৫, কক্সবাজার সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ও প্রকাশিত ব্যক্তিদের চিহিৃতসহ জড়িত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে টেকনাফ, উখিয়া ও মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ র্যাবের আভিযানিক দল অভিযান অব্যাহত রাখে।তারই অংশ হিসেবে ১৬ মে র্যাব-১৫ কক্সবাজারস্থ সিপিএসসি এর আভিযানিক দল বিশ্বস্থ সূত্রে অবগত হয়, বর্নিত ঘটনার ধারাবাহিকতায় টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার জকিরসহ কতিপয় ইয়াবা ব্যবসায়ী মায়ানমার হতে ইয়াবা সংগ্রহ করে সাগর পথে মহেশখালী হয়ে বোট যোগে কক্সবাজার চৌফদন্ডী ঘাট হয়ে ঈদগাঁও এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে আসছে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ১৬ মে রাত ৮ টার দিকে র্যাব-১৫ আভিধানিক দল ঈদগাঁও থানাধীন ঈদগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আল মাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনের পুকুরের পশ্চিম-উত্তর কর্ণারে পাকা রাস্তার উপর উপস্থিত হয়ে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশী অভিযান পরিচালনার এক পর্যায়ে অজ্ঞাতনামা সিএনজি থেকে নেমে দুইজন ব্যক্তি কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে র্যাবের আভিযানিক দল কর্তৃক ধৃত হয়। উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত ব্যক্তিদ্বয়ের দেহ ও বাজারের ব্যাগ তল্লাশী করে তাদের হেফাজত হতে সর্বমোট ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব আরো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী জকির জানায় যে, সে টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকার ইয়াবা গডফাদার এবং তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোককে সীমান্তবর্তী মায়ানমার এলাকায় বন্ধক রেখে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসে। ফেইসবুক, গনমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচিত ঘটনায় সে প্রত্যক্ষ্যভাবে জড়িত ছিল এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত জসিম তার পরিচিত লোককে মায়ানমারে বন্ধক রেখে ২৫ লক্ষ টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করে।অদ্য উপরোল্লিখিত ইয়াবা ট্যাবলেটসহ র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দলের কাছে ধৃত হয়।
ইয়াবা সম্রাট মোঃ জাকির আহমেদ প্রঃ জকিরের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের জড়িত থাকার অপরাধে টেকনাফ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ৫ টির অধিক মামলা রয়েছে।
উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যসহ বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে মাদক পাচারের নিরাপদ জোন খ্যাত চৌফলদন্ডী ব্রীজ সংলগ্ন ঘাট এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।