Thursday, December 7, 2023

স্টার ফিস

বেলাল হায়দার পারভেজ

বঙ্গপোসাগরের পূর্ব উপকূল বিশেষ করে কক্সবাজারে বাস করেন কিন্তু স্টার ফিস দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল।যদিও নামের সাথে ফিস শব্দটি আছে তবে স্টার ফিস আসলে কোন মাছ নয়।এটি মূলত সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী।তাই স্টারফিসকে সামুদ্রিক তারা বা সী স্টার বলাই অধিকতর যুক্তিসংগত।

মৎস্যজীবীদের টানা জালে অনান্য মাছের সাথে প্রায়শই স্টার ফিস ধরা পড়ে।কখনো কখনো ভাটার সময় সৈকতের বালিয়ারিতে স্টার ফিস আটকা পড়ে।

দেখতে তারার মত বলেই মানুষ এর নাম দিয়েছে স্টারফিশ বা সী স্টার বা তারা মাছ। গ্রীষ্মমন্ডল থেকে শুরু করে হিমশীতল মেরু অঞ্চল পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরে সমুদ্রতটে এদের দেখা মেলে।পৃথিবীতে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির স্টারফিশ সনাক্ত করা হয়েছে।প্রজাতিভেদে এরা লাল,কমলা,নীল, ধূসর বা বাদামী রঙের সহ বিভিন্ন শেডের উজ্জ্বল রঙের হয়।

এদের দেহে সাধারণত একটি কেন্দ্রীয় ডিস্ক এবং পাঁচটি বাহু থাকে, যদিও কিছু প্রজাতির আরও বেশি থাকে। উপরের পৃষ্ঠটি মসৃণ, দানাদার বা কাঁটাযুক্ত হতে পারে এবং ওভারল্যাপিং প্লেট দিয়ে আচ্ছাদিত।নীচের পৃষ্ঠের কেন্দ্রে একটি মুখ থাকে।

স্টারফিশের জীবনচক্র বেশ জটিল জটিল এবং বিষ্ময়কর। যৌন ও অযৌন উভয়ভাবেই প্রজনন করতে পারে। এদের দেহের কোন একটি অংশ কোন কারণে বিছিন্ন হয়ে গেলে সে অংশটি তারা পুনরায় নিজ থেকেই সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি কিছু স্টারফিশের একটি বাহু শরীর থেকে বিছিন্ন হয়ে গেলে সেই বিছিন্ন বাহুর টুকরো থেকেও তাদের পুরো শরীরকে পুনরায় আগের মতই পুর্নগঠন করে নতুন একটি তারামাছের জন্ম দিতে পারে।দেহের একটি বিছিন্ন অংশ থেকে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে কয়েক মাস বা বছর সময় লাগতে পারে।

স্টারফিস মাংশাশী প্রাণী হলেও এটি সমুদ্র তলের সবকিছুই ভক্ষণ করে এবং একদিকে শিকার(prey) অন্যদিকে শিকারী (predators) ’র ভূমিকা পালন করে সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। স্টারফিশের খাদ্য তালিকায় রয়েছে আহত মাছ, ঝিনুক, ক্লাম এবং স্যান্ড ডলার।অনেক সময় স্টারফিশ একে অপরকে খেয়ে থাকে।

বিষ্ময়ের ব্যপার হলো স্টার ফিসের কোন রক্ত নেই। তাদের শিরা দিয়ে রক্ত ​​চলাচলের পরিবর্তে স্টারফিশের একটি জলীয় ভাস্কুলার সিস্টেম রয়েছে যা অন্য প্রানীর দেহের রক্তের মতোই কাজ করে।

স্টার ফিস খাওয়ার জন্য তাদের পা ব্যবহার করে।তাদের পায়ের পিছনে ছোট সাকশন কাপ রয়েছে যার মাধ্যমে খাবার ধরে রাখে।এই পাগুলি এতটাই শক্তি প্রয়োগ করতে পারে যে শামুক এবং ঝিনুকের মতো শেলফিশ খুল ফেলে ভক্ষণ করতে পারে। মজার ব্যাপার হলো স্টারফিস তাদের খাবার শরীরের বাইরে হজম করে।পায়ের মাধ্যমে খাবার ধরে মুখের কাছে নিয়ে তারা তাদের পেট মুখের বাইরে প্রসারিত করে শিকারকে আবৃত করে হজম করে।

স্টারফিশ শুধুমাত্র লবণাক্ত জলে বাস করে।মিঠা পানিতে তারা বাঁচতে পারেনা এবং পানি ছাড়া কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা মারা যায়।

একটি স্টার ফিসের গড় আয়ুষ্কাল প্রাকৃতিক পরিবেশে ৩৫ বছর। তবে এক্যুরিয়ামে তারা মাত্র ৫-১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই বিষ্ময়কর প্রাণীটিকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ