অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আমাদের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হচ্ছে- এই কথা বলে কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে সেখানে বসিয়ে রেখে তারা আমাদের সারাক্ষণ ভীতির মধ্যে রেখেছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গণআকাঙ্ক্ষা মঞ্চের আয়োজনে ‘গণআকাঙ্ক্ষা, গণঅভ্যুত্থান প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘ভারত কি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে? তারা হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশে কি রাখতে পেরেছে? তাহলে ভারতকে আমরা ভয় পাবো কিসের জন্য! আমরা যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছি, সেই পরিবর্তন আমাদের সন্তানেরা করেছে। তারা ভারতসহ সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে গণঅভ্যুত্থান কী জিনিস। গণঅভ্যুত্থান করে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্টকে সরাতে পেরেছে। যেটা কোনও রাজনৈতিক দল পারেনি। কাজেই আমরা ভারতকে ভয় পাই না। ভারত একটা জুজুর ভয় সৃষ্টি করছে। তারা এটা করে একটা ভালো কাজ করেছে। এখন সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে ঐক্যের কথা বলছে। এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসেনি, এটা ক্ষমতা নয়, আমরা দায়িত্বে গিয়েছি। ক্ষমতায় বসার কোনও যোগ্যতা আমাদের নেই। যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা যেন ‘ক্ষমতায়’ না বসে এই চেষ্টা করতে হবে। এটাই হবে সংস্কার। আমরা কাউকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। ক্ষমতা যে কী ভয়াবহ জিনিস সেটা আমরা দেখেছি। দায়িত্ব যারা নেবেন, যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করতে চান, তাদের আগেই বার্তাটা দিতে হবে, আপনারা ক্ষমতায় যাচ্ছেন না। আপনারা যদি দায়িত্ব নিতে চান তাহলে নির্বাচন করেন। তা না হলে নির্বাচন করার কোনও অধিকার নেই।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘বাংলাদেশের এবারের পরিবর্তনের সঙ্গে অতীতের গণঅভ্যুত্থানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এবারের দাবি ছিল স্বৈরাচার সরকার পতনের। ভবিষ্যতে কেউ যাতে আর হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য এই আন্দোলন হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য এই সরকারকে বসানো হয়েছে। এ সরকারকে এটা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশকে সংস্কার করার জন্য এই পরিবর্তন হয়েছে। সংস্কার করে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আপনাকে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে সংস্কার হোক, এটা আওয়ামী লীগ ও ভারত চায় না। হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আজ ফ্যাসিবাদের মাথা চলে গেছে, কিন্তু সে ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তার রেখে যাওয়া লোকজন ও সংগঠনের হাতে যে পরিমাণ টাকা এবং অস্ত্রশস্ত্র রয়ে গেছে, সেগুলো না থাকলে সরকার অনেক সহজে কাজ করতে পারতো, অনেকগুলো মৌলিক সংস্কার করতে পারতো। ফ্যসিবাদ এখনও আমাদের সামনে-পেছনে একটা ভীতি দাঁড় করিয়ে রেখেছে, একের পর এক দাবি দাওয়া, ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা রিকশাচালক-আনসার বাহিনী হয়ে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ভারতের মিডিয়া ভুয়া খবর তৈরি করে গুজব ছড়াচ্ছে।’
গণ-আকাঙ্ক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গোলাম সরওয়ার, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় দাসসহ নাগরিক, শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক ও ভূমিহীন প্রতিনিধিরা।