রাতভর অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৯ মে) সকাল পৌনে ৬টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় তার নিজ বাসভবন চুনকা কুটির থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে এই নেত্রীকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে হাজার হাজার এলাকাবাসীর বাধার মুখে পুলিশ রাতে তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইভীকে গ্রেফতার করতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশের একটি টিম দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাসভবন চুনকা কুটিরে প্রবেশ করে। এই খবর শুনে চারদিক থেকে হাজার হাজার এলাকাবাসী তার বাড়ির সামনে এসে ভিড় করে। বাড়ির প্রধান ফটক অবরোধ করে তাকে গ্রেফতার না করার দাবিতে নানা স্লোগান দেয়। এ সময় আইভীর বাড়ির প্রবেশপথের দুই রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। আশেপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরে জেলা পুলিশের আরেকটি টিম এসে আইভীর বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। এ সময় তারা পুলিশকে চলে যেতে বলে। পরে তাদের অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে পুলিশের তিন সদস্যের টিম বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে আইভীর বাড়িতে চা-বিস্কুট আপ্যায়ন করা হয় পুলিশকে। তবে রাতে গ্রেফতারের বিষয়ে আপত্তি করে আইভী। এ কারণে তাকে সকালে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভোরে ফজরের নামাজ শেষে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেফতারের সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আলী আহাম্মদ চুনকার সন্তান। আমার বাবা সাম্যের রাজনীতি করেছেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এসে রাজনীতি করেছেন। আমার যদি জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু বলার কারণে অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই। এ জন্য যদি বিচার হয় তাহলে বিচার হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরে দীর্ঘ ২১ বছর আমি আপনাদের সেবা দিয়েছি। কোনোদিন কেউ বলতে পারবে না প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অন্য কোন দলের প্রতি আঘাত করেছি। সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে প্রতিবাদ করি নাই। ত্বকী হত্যাকাণ্ডসহ সকল হত্যাকাণ্ডে যখন নারায়ণগঞ্জবাসী একদম চুপ ছিল তখন এই আইভী আওয়াজ তুলেছে কথা বলা শিখিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শিখিয়েছে। আজকে সেই আইভীকে কীসের জুলুমে কীসের কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা জানি না। কোন ষড়যন্ত্রের কারণে কার স্বার্থে আমাকে গ্রেফতার করা হলো, প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলবো আপনারা সব সময় আমার পাশে থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান যারা সরকার আছেন, সাম্যের কথা বলেছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন। সরকার হটিয়ে নতুন সরকার এসেছে। তাহলে কি এই বৈষম্য? তাহলে অনেস্ট রাজনীতি সততার কীসের মূল্যায়ন। আমি তো বাড়িতেই ছিলাম পালাইনি। তাহলে এভাবে আমাকে গ্রেফতার করতে হলো কেন? এর জবাব জনগণের কাছে চাই।’ এরপর তিনি জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে পুলিশে সঙ্গে চলে যান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় রাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে যায় পুলিশ। তবে আইভী রাতের সময়ে গ্রেফতার করার বিষয়ে আপত্তি করেন। তিনি দিনের আলোতে গ্রেফতার করার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। এসব মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতারের বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান।
সূত্র :বাংলা ট্রিবিউন