ঢাকা ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কক্সবাজার কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবীতে টেকনাফে বিএনপির মিছিল সিবিআইইউ ল এ্যালমনাই এসোসিয়েশন গঠিত কক্সবাজার কলেজে বেগম জিয়াকে নিয়ে ‘মিমিক্রি’ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন মহেশখালীর সলিমুল্লাহ খানসহ ১০ জন কক্সবাজার শহরে নিম্নমানের সড়ক বাতি: সন্ধ্যা হলে জ্বলেনা মহেশখালীতে দিনে বালি পাচারের অভিযোগ: রাতে খননযন্ত্রসহ ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা পালংখালী ইউনিয়ন যুবদলের কমিটি অনুমোদন ১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআরের ১৬৮ সদস্য এবার ৫ স্কুলের ১৫০ শিক্ষার্থী পাচ্ছে সুন্দর হস্তাক্ষর পুরস্কার কুতুবদিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বিজিবি টেকনাফ থেকে সাড়ে ৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করলো যেভাবে! সেন্ট মার্টিনে কুকুর নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বাঁচতে চায় জটিল রোগে আক্রান্ত আজিজ, সাহায্যের প্রয়োজন কক্সবাজার সরকারি কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব এবং উদ্ভাবনী ও উদ্যোক্তা মেলা শুরু ‘স্বেচ্ছায় পাচার’ হতে গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর: আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চান মা

ফেলানী হত্যার ছবি হাতে ফেলানীর মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত

‘আগে যে সরকার ছিল তারা অনেক আশা দিছে। আমার মেয়ের বিচার করবে, আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ দেবে, সন্তানদের পড়াশোনা করালে চাকরি দেবে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত সরকারের একজন লোকও আসে নাই, মেয়ে হত্যার বিচারটাও পাই নাই। এখন তো নতুন সরকার আসলো। এখন যদি বিচারের ব্যবস্থাটা করে। আমি চাই এই সরকার যেন আন্তর্জাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করে।এটাই এই সরকারের কাছে আমার দাবি।’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রমের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী। তার লাশ কাঁটাতারে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে ঝুলে ছিল। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশ আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পার হলেও বিচার পায়নি পরিবার। এখন বিচার চেয়ে বর্তমান সরকারের কাছে এভাবেই দাবি জানালেন তার মা জাহানারা বেগম। ন্যায়বিচার নিয়ে হতাশার তলানিতে পৌঁছেও নতুন সরকারের কাছে নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আবেদন জানান এই মা।

ফেলানীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের অভাব এবং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে জাহানারা বেগম বলেন, ‌‘প্রত্যেক বছর মৃত্যুবার্ষিকী আসলে টিএনওর কাছে যাই, ডিসির কাছে যাই। কিন্তু দুই বছর থেকে কোনও সাহায্য পাই না। আমার বাচ্চাগুলাকে কষ্ট করে পড়াশোনা করাইছি। কিন্তু চাকরি নাই। সরকার যেন আমার ছেলের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ছোট চাকরি হলেও যেন দেয়। তাহলে অন্তত জীবনের বাকি দিনগুলা আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারবো।’

দীর্ঘ সময়েও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে প্রতিনিয়ত হতাশা ও আক্ষেপ করে চলছেন বাবা-মা। তাদের প্রশ্ন, একটি প্রমাণিত হ্ত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে আর কতদিন লাগবে? তারা উভয় দেশের সরকারের কাছে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

ফেলানী খাতুনের লাশ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের ‘সীমান্তনীতি’। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ‘বিচারের’ ব্যবস্থা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন নূরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারও আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। দুই দফা অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়ান রায় প্রত্যাখ্যান করে ২০১৫ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে যৌথ রিট আবেদন করেন নুরুল ইসলাম এবং ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়। কিন্তু একের পর এক তারিখ পিছিয়ে আজও সে রিটের নিষ্পত্তি হয়নি।

সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি সেই রিটের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আবারও তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন কিশোরীর পরিবারকে আইনি পরামর্শ দেওয়াসহ ফেলানীর বাবার সঙ্গে ভারতে একাধিকবার সহযাত্রী হওয়া কুড়িগ্রামের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মানবাধিকারকর্মী এস এম আব্রাহাম লিংকন।

ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়ের বরাতে তিনি বলেন, ‘আবার তারিখ পিছিয়েছে। কার্য তালিকায় নতুন তারিখ ২৯ জানুয়ারি। আমি মনে করি, ভারতীয় উচ্চ আদালত রিটটির শুনানি নিয়ে ন্যায় বিচার করবেন। ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার পেলে কারও জয় বা পরাজয় হবে না। সেটা মানবাধিকারের বিজয় হবে।’

‘অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত খুনি। সে বলেছে তার গুলিতে মারা গেছে। খুনিকে সাজা দেওয়াই ন্যায়বিচার, খালাস ন্যায়বিচার নয়। আমরা বিএসএফের আদালতে ন্যায়বিচার পাইনি। ভারতের উচ্চ আদালতের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। তারা যদি ন্যায়বিচার করেন তাতে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইনের সুরক্ষা হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সেটা সুরক্ষা দেবে। সেটা মানবতার বিজয় হবে, কারও পরাজয়ের প্রশ্ন আসবে না। মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে। তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জবাবদিহির আওতায় আসবে। ট্রিগার ফ্রি থাকবে না’ বলে উল্লেখ করেন আব্রাহাম লিংকন।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন

ট্যাগ :

কক্সবাজার কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবীতে টেকনাফে বিএনপির মিছিল

This will close in 6 seconds

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর: আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চান মা

আপডেট সময় : ০৬:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

‘আগে যে সরকার ছিল তারা অনেক আশা দিছে। আমার মেয়ের বিচার করবে, আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ দেবে, সন্তানদের পড়াশোনা করালে চাকরি দেবে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত সরকারের একজন লোকও আসে নাই, মেয়ে হত্যার বিচারটাও পাই নাই। এখন তো নতুন সরকার আসলো। এখন যদি বিচারের ব্যবস্থাটা করে। আমি চাই এই সরকার যেন আন্তর্জাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করে।এটাই এই সরকারের কাছে আমার দাবি।’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রমের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী। তার লাশ কাঁটাতারে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে ঝুলে ছিল। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশ আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পার হলেও বিচার পায়নি পরিবার। এখন বিচার চেয়ে বর্তমান সরকারের কাছে এভাবেই দাবি জানালেন তার মা জাহানারা বেগম। ন্যায়বিচার নিয়ে হতাশার তলানিতে পৌঁছেও নতুন সরকারের কাছে নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আবেদন জানান এই মা।

ফেলানীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের অভাব এবং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে জাহানারা বেগম বলেন, ‌‘প্রত্যেক বছর মৃত্যুবার্ষিকী আসলে টিএনওর কাছে যাই, ডিসির কাছে যাই। কিন্তু দুই বছর থেকে কোনও সাহায্য পাই না। আমার বাচ্চাগুলাকে কষ্ট করে পড়াশোনা করাইছি। কিন্তু চাকরি নাই। সরকার যেন আমার ছেলের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ছোট চাকরি হলেও যেন দেয়। তাহলে অন্তত জীবনের বাকি দিনগুলা আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারবো।’

দীর্ঘ সময়েও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে প্রতিনিয়ত হতাশা ও আক্ষেপ করে চলছেন বাবা-মা। তাদের প্রশ্ন, একটি প্রমাণিত হ্ত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে আর কতদিন লাগবে? তারা উভয় দেশের সরকারের কাছে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

ফেলানী খাতুনের লাশ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের ‘সীমান্তনীতি’। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ‘বিচারের’ ব্যবস্থা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন নূরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারও আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। দুই দফা অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়ান রায় প্রত্যাখ্যান করে ২০১৫ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে যৌথ রিট আবেদন করেন নুরুল ইসলাম এবং ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়। কিন্তু একের পর এক তারিখ পিছিয়ে আজও সে রিটের নিষ্পত্তি হয়নি।

সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি সেই রিটের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আবারও তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন কিশোরীর পরিবারকে আইনি পরামর্শ দেওয়াসহ ফেলানীর বাবার সঙ্গে ভারতে একাধিকবার সহযাত্রী হওয়া কুড়িগ্রামের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মানবাধিকারকর্মী এস এম আব্রাহাম লিংকন।

ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়ের বরাতে তিনি বলেন, ‘আবার তারিখ পিছিয়েছে। কার্য তালিকায় নতুন তারিখ ২৯ জানুয়ারি। আমি মনে করি, ভারতীয় উচ্চ আদালত রিটটির শুনানি নিয়ে ন্যায় বিচার করবেন। ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার পেলে কারও জয় বা পরাজয় হবে না। সেটা মানবাধিকারের বিজয় হবে।’

‘অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত খুনি। সে বলেছে তার গুলিতে মারা গেছে। খুনিকে সাজা দেওয়াই ন্যায়বিচার, খালাস ন্যায়বিচার নয়। আমরা বিএসএফের আদালতে ন্যায়বিচার পাইনি। ভারতের উচ্চ আদালতের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। তারা যদি ন্যায়বিচার করেন তাতে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইনের সুরক্ষা হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সেটা সুরক্ষা দেবে। সেটা মানবতার বিজয় হবে, কারও পরাজয়ের প্রশ্ন আসবে না। মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে। তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জবাবদিহির আওতায় আসবে। ট্রিগার ফ্রি থাকবে না’ বলে উল্লেখ করেন আব্রাহাম লিংকন।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন