ঢাকা ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গোপন ‘গুদামে’ মাদক রাখে কারা? নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন ইমাম হোসেন: দ্রুত গতির মোটরসাইকেল কেড়ে নিলো প্রাণ মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই : প্রেস উইং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এবার শূকর ও কুকুরের প্রাণহানি প্রেসক্লাবের ইফতার সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির একটি মাধ্যম-ইউএনও চকরিয়া আবুল কাসেম বাবুর ২য় মৃত্যু বার্ষিকীতে জেলা খেলাঘরের স্মরণ সভা বিয়ের দু’মাসেই সড়ক দূর্ঘটনায় দম্পতি: স্বামী নিহত স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি উত্তর ধূরুং ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন উখিয়ায় তরুণ সংবাদকর্মীদের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন “মোহাম্মদ জাবেরের সন্ধান চাই” আমরা দুনিয়ার মাঠে খেলার খেলোয়াড়, ছোট মাঠের না: প্রধান উপদেষ্টা যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ মাদককারবারি আটক এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে হত্যার ৮ ঘন্টার ব্যবধানে তিন সহোদরসহ গ্রেফতার চার পেকুয়ায় সাপের কামড়ে মৃত্যু: ওঝার কাছে যাওয়ায় দেরি হয় হাসপাতালে নিতে

অহংকারের একুশ

  • টিটিএন ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৬:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 72

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি…

না, আমরা ভুলতে পারি না। আমি না। আমরাও না। কোনো বাঙালিই ভুলতে পারে না। ভুলতে পারবে না কোনোদিন। কেন ভুলব? সেদিন রাজপথে রক্ত ঝরেছে আমার ভাইয়ের। মায়ের ভাষার জন্য লড়াই করেছেন তারা। প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহ- বাংলা মায়ের অমর শহীদ ছেলে। বুকের রক্ত দিয়ে তারা লিখেছেন বাঙালির পালটে যাওয়ার নতুন ইতিহাস। সেদিনের বাংলাভাষার দাবি থেকেই আজকের বাংলাদেশ। নিজের ভাষায় কথা বলা। স্বাধীন দেশে পথচলা।

একুশ মানে এগিয়ে চলা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের চেতনার শেকড়। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহঙ্কার। তাই প্রতি বছর আমরা একুশ পালন করি শোকের শক্তিকে শাণিত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে- শুধু আবেগে দিনটি পালন নয়।

দিনটিতে নয় কোনো আনন্দ উৎসব। এটি মহান শহীদ দিবস। এটা যেমন শোকের দিন, তেমনি শক্তি আর সাহসের অপরাজেয় বরাভয়। খালি পায়ে প্রভাতফেরির দিবস। শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। বাঙালি চেতনায় অনড় শপথের দিন। শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন যাপনে একুশকে ধারণের দিন। আর তাই জানতে হবে একুশের ইতিহাস।

অমর কেন একুশ? একুশে ফেব্রুয়ারি? এ দেশ ছিল আগে পাকিস্তানের শাসনে। পশ্চিমা শাসকরা তাদের উর্দু ভাষায় কথা বলাতে চেয়েছিল আমাদের। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলার টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল তারা।

প্রতিবাদে বাঙালির ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তারপর চরম প্রকাশ। সেদিন ১৯৫২ সাল। একুশে ফেব্রুয়ারি। সকালবেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে ফেলে। আন্দোলনে নেমে পড়ে রাজপথে। পুলিশ গুলি চালায় তাদের ওপর। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। নাম জানা-অজানা শহীদ হন অনেকেই। ক্ষুব্ধ ঢাকা। উত্তাল সারা দেশ। পরদিন আবার রাজপথে বিক্ষুব্ধ আন্দোলন। এবার ছাত্রদের পাশে নামেন সাধারণ মানুষ। শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় গায়েবানা জানাজা।

২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একরাতেই গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ- শহীদ মিনার। ২৬ ফেব্রুয়ারি তা গুঁড়িয়ে দেয় সরকার। তারপরও ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদের অধিবেশনে এ দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শোক দিবস। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জাতীয় শহীদ মিনার সেই শোকের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বাঙালির মাতৃভাষাকে ভালোবাসার চেতনা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ অর্জন বাঙালির। বাংলাদেশের। ১৯৯৮ সাল। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান। তার কাছে আবেদন করা হয় একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য। এর প্রাথমিক উদ্যোক্তা কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি- রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম।

পরের বছর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিসে অধিবেশনে সেই স্বীকৃতি মিলল। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করা হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে পালিত হচ্ছে।

একুশের চেতনা কী? আর তরুণরা সেই চেতনা ধারণ করে কিভাবে? শুধু তরুণ নয়, আমাদের সবাইকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে- একুশ কোনো আনন্দ উৎসব নয়। শহীদ ভাইদের রক্তঝরা দিন। একুশের চেতনা মানে সেজেগুজে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ানো নয়।

নেচে-গেয়ে মাতামাতি নয়। শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে হইহুল্লোড় নয়। মজা করে পিঠা-পায়েস আর ফুচকা চটপটি খাওয়ার দিন নয়। বাংলা ইংরেজি হিন্দি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষা নয়। একুশ মানে একদিন নয়। প্রতিদিন। শুদ্ধ বাংলা বলা। শুদ্ধ বাংলার চর্চা। সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন। শহীদ দিবস যথাযথ পালন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গোপন ‘গুদামে’ মাদক রাখে কারা?

This will close in 6 seconds

অহংকারের একুশ

আপডেট সময় : ০৬:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি…

না, আমরা ভুলতে পারি না। আমি না। আমরাও না। কোনো বাঙালিই ভুলতে পারে না। ভুলতে পারবে না কোনোদিন। কেন ভুলব? সেদিন রাজপথে রক্ত ঝরেছে আমার ভাইয়ের। মায়ের ভাষার জন্য লড়াই করেছেন তারা। প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহ- বাংলা মায়ের অমর শহীদ ছেলে। বুকের রক্ত দিয়ে তারা লিখেছেন বাঙালির পালটে যাওয়ার নতুন ইতিহাস। সেদিনের বাংলাভাষার দাবি থেকেই আজকের বাংলাদেশ। নিজের ভাষায় কথা বলা। স্বাধীন দেশে পথচলা।

একুশ মানে এগিয়ে চলা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের চেতনার শেকড়। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহঙ্কার। তাই প্রতি বছর আমরা একুশ পালন করি শোকের শক্তিকে শাণিত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে- শুধু আবেগে দিনটি পালন নয়।

দিনটিতে নয় কোনো আনন্দ উৎসব। এটি মহান শহীদ দিবস। এটা যেমন শোকের দিন, তেমনি শক্তি আর সাহসের অপরাজেয় বরাভয়। খালি পায়ে প্রভাতফেরির দিবস। শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। বাঙালি চেতনায় অনড় শপথের দিন। শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন যাপনে একুশকে ধারণের দিন। আর তাই জানতে হবে একুশের ইতিহাস।

অমর কেন একুশ? একুশে ফেব্রুয়ারি? এ দেশ ছিল আগে পাকিস্তানের শাসনে। পশ্চিমা শাসকরা তাদের উর্দু ভাষায় কথা বলাতে চেয়েছিল আমাদের। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলার টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল তারা।

প্রতিবাদে বাঙালির ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তারপর চরম প্রকাশ। সেদিন ১৯৫২ সাল। একুশে ফেব্রুয়ারি। সকালবেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে ফেলে। আন্দোলনে নেমে পড়ে রাজপথে। পুলিশ গুলি চালায় তাদের ওপর। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। নাম জানা-অজানা শহীদ হন অনেকেই। ক্ষুব্ধ ঢাকা। উত্তাল সারা দেশ। পরদিন আবার রাজপথে বিক্ষুব্ধ আন্দোলন। এবার ছাত্রদের পাশে নামেন সাধারণ মানুষ। শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় গায়েবানা জানাজা।

২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একরাতেই গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ- শহীদ মিনার। ২৬ ফেব্রুয়ারি তা গুঁড়িয়ে দেয় সরকার। তারপরও ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদের অধিবেশনে এ দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শোক দিবস। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জাতীয় শহীদ মিনার সেই শোকের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বাঙালির মাতৃভাষাকে ভালোবাসার চেতনা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ অর্জন বাঙালির। বাংলাদেশের। ১৯৯৮ সাল। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান। তার কাছে আবেদন করা হয় একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য। এর প্রাথমিক উদ্যোক্তা কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি- রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম।

পরের বছর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিসে অধিবেশনে সেই স্বীকৃতি মিলল। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করা হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে পালিত হচ্ছে।

একুশের চেতনা কী? আর তরুণরা সেই চেতনা ধারণ করে কিভাবে? শুধু তরুণ নয়, আমাদের সবাইকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে- একুশ কোনো আনন্দ উৎসব নয়। শহীদ ভাইদের রক্তঝরা দিন। একুশের চেতনা মানে সেজেগুজে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ানো নয়।

নেচে-গেয়ে মাতামাতি নয়। শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে হইহুল্লোড় নয়। মজা করে পিঠা-পায়েস আর ফুচকা চটপটি খাওয়ার দিন নয়। বাংলা ইংরেজি হিন্দি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষা নয়। একুশ মানে একদিন নয়। প্রতিদিন। শুদ্ধ বাংলা বলা। শুদ্ধ বাংলার চর্চা। সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন। শহীদ দিবস যথাযথ পালন।